Wednesday, April 4, 2012

মিসরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুড প্রধান ড. মুহাম্মাদ বদিই



প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক
 
মিসর, ১ এপ্রিল: বিপ্লব পরবর্তী মিসর ও জনগণের সার্বিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান খাইরাত আল সাতিরকে
আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছে মুসলিম ব্রাদারহুড ও তার রাজনৈতিক সংগঠন ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্ট্রিস পার্টি। শনিবার রাতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলের প্রধান ড. মুহাম্মাদ বদিই।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মোবারকের শাসন থেকে জাতি মুক্তি পেলেও বর্তমান সরকার থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। বিপ্লব ও মানুষের আশার কোনো পূর্ণ প্রতিফলন এখনো ঘটেনি। নানা অজুহাতে সংসদ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেও পারেনি। আমরা যদিও বলেছিলাম কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী দেব না কিন্তু জানজুরি সরকার উৎখাত ও সেনাদের ব্যারাকে পাঠিয়ে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে এ পদক্ষেপ গ্রহনের বিকল্প নেই।”

তিনি বলেন, “আমরা সব দলের প্রার্থীদের সম্মান জানাই। তবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আব্দুল মুনিম আবুল ফুতুহ, হাজেম সালাহ আবু ইসমাইল হামদিন সবাহিসহ আরো অনেক প্রার্থী থাকায় মুসলিম নেতারা আজ বিভক্ত। এই অবস্থায় বামপন্থীরা সুযোগ গ্রহণ করতে পারে বিধায় আমাদের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে তাকে নির্বাচন করেছি। তাছাড়া তিনি সর্বদা ইসলামি আদর্শ ও চিন্তাধারায় বিশ্বাসী। তিনি হলেন মিসরের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। আশা করি সচেতন মিসরবাসী তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অতীতের মতো আর কোনো ভুল করবে না।”

সম্মেলনে ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্ট্রিজ পার্টি প্রধান ড. মুহাম্মাদ মুরসি বলেন, “ব্রাদারহুড সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন ছাড়াও স্বতন্ত্র ৬০টি আসন লাভ করেছে। কাজেই দেশের মানুষের দাবি ও চাহিদা পূরণে ইঞ্জিনিয়ার খাইরাত আল সাতিরকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নির্বাচন করতে এক রকম বাধ্য হচ্ছি। সংসদের পরামর্শ উপেক্ষা করে নতুন সরকার গঠনের পরিবর্তে জানজুরী সরকার দীর্ঘায়ু লাভের স্বপ্ন দেখছে। ফলে আমাদের শঙ্কা ও দুঃশ্চিন্তা এখনো অবসান হয়নি।”

তিনি বলেন, “সাতির তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সক্ষম। আর তার নির্বাচন করতে আইনগত কোনো জটিলতাও নেই।”

মুসলিম ব্রাদারহুডের সেক্রেটারি জেনারেল মাহমুদ হোসাইন সম্মেলনে বলেন, “ইখওয়ানের মূলনীতি ঠিক রেখেই তাকে প্রার্থী বানানো হয়েছে। তিনি মজলিসে শুরার ৬৪ ভোটের মধ্যে ৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বর্তমানে নির্বাচনের নীতিমালার কারণে দলীয় পদ ছেড়ে দিয়েছেন। সর্বোপরি জনগণের স্বার্থ ঠিক রাখতেই এ সিদ্ধন্ত নেয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “তার মানে এই নয় আমারা শুধু ক্ষমতার রাজনীতি করি। তিনদিনের বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নেতারা মনে করেন, ইখওয়ানের দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সামাজিক যে অভিজ্ঞতা আছে তা দেশ চালাতে যথেষ্ট।”

এদিকে মুসলিম ব্রাদারহুড প্রার্থী ঘোষণার পর সেলিম আল আওয়াসহ অনেকেই তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। তবে বামপন্থী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হামদিন সবাহি ইখওয়ানের কড়া সমালচনা করেন।

প্রার্থীর পরিচয়
তিনি মুবারক আমলে একাধিক মিথ্যা মামলায় একাধারে সাত বছর জেলে ছিলেন। সর্বমোট জেলে ছিলেন ছয়বার।
তিনি ১৯৫০ সালে ৪ মে দাকহালিয়া নামক জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৮ সাল থেকেই মিসরের সাবেক প্রসিডেন্ট জামাল নাসের ও আনোয়ার সায়াদাতের আমল কারাবরণ করে আসছেন। ১৯৯২ সালে আবার কারাবরণ করেন এক বছরের জন্য। ১৯৯৫ সালে আবার পাঁচ বছরের জন্য। ২০০১ সালে আবার এক বছরের জন্য। ইসালামি আন্দোলন করার কারণে তাকে ১৯৮১ সালে মানছুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাম কেটে দেয়া হয়। ১৯৬৬ সালে এইচ এস সি পাশ করার সময় সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার মাধ্যমে তিনি রাজনীতিতে আসেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দশ ছেলে-মেয়ের জনক। তিনি সাবেক ইখওয়ান প্রধান মাহদি আকেফের সময় মজলিসে শুরার সদস্য হন ১৯৯৫ সালে। তিনি ইখওয়ান ওয়েবের রূপকার। ২০০৫ সালের সংসদ নির্বাচনে এম পি নির্বাচিত হন। তার দশ ছেলে মেয়ে এবং ষোলজন নাতি-পুতি।

তিনি এ যাবত চার বিষয়ে ডিপ্লোমা করেছেন। অনার্স করেছেন আইনুস সামস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মাস্টার্স করেছেন মানছুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এ ছাড়া কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশুনা করেছেন।

No comments:

Post a Comment